পৃথিবীর চলমান তাপমাত্রা অনুযায়ী বর্তমানে গ্রীষ্মকালটা সবার জন্যই একটা কঠিন সময়। গ্রীষ্মের তাপে বড়দের মতো শিশুদেরও নানান সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে নবজাতক শিশুদের নিয়ে বাবা মা পড়েন ভীষণ টেনশনে।বেশিরভাগ মা বাবার চিন্তা থাকে এসময় তাদের কী খাওয়ানো উচিত, কীভাবে রাখা উচিত এবং কীভাবে গোসল করানো উচিত? অনেকেই এর প্রতিকার সম্পর্কে ধারণা রাখেন অথবা কারো কাছ থেকে পরামর্শ পেয়ে থাকেন। আজকে আমরা সেই প্রতিকারের বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা করবো।

গ্রীষ্মে নবজাতক শিশুর যত্নের গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস

গ্রীষ্মে নবজাতক শিশুর যত্নের গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস

১. গ্রীষ্মকালে নবজাতককে যতদিন পর পর গোসল করবেনএটি সম্পূর্ণরূপে আপনার শিশুর পছন্দের ওপর নির্ভর করে। তবে এক্ষেত্রে একটা বিষয় মনে রাখা জরুরি তা হলো, গোসলের পনি রিফ্রেজারেটর বা অন্য কোনো উপায়ে ঠাণ্ডা করা উচিত নয়। আবার অনেক সময় পানির ট্যাংকে সূর্যের আলো পড়ার ফলে পানি অতিরিক্ত গরম থাকে। এতো গরম পানিও ব্যবহার করা যাবে না৷শিশুকে গোসল করানোর জন্য পানিতে আপনার কনুইটিকে ডুবিয়ে হালকা কুসুম গরম কিনা পরীক্ষা করে নিন। শিশুদের গ্রীষ্মকালে সুস্থ রাখার গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ হলো গোসল। কারণ নিয়মিত গোসল মানুষের শরীরের তাপমাত্রাকে রাখে সহনীয় মাত্রায় এবং অনেক অসুস্থতা থেকে মুক্তি দেয়।

২. গ্রীষ্মে শিশুর ত্বকে পাউডার ব্যবহার করতে পারেনগ্রীষ্মে শিশুর ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে পাউডারের বিকল্প নেই। এটি শিশুকে ঘাম ও অন্যান্য অনেক সমস্যা থেকে মুক্ত করে৷ কিন্তু অনেক মা বাবা এটা বিশ্বাস করেন না এবং শিশুকে পাউডার দিতে ভয় পান। কিন্তু অনেক শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, পাউডার আপনার শিশুর ত্বকে শীতল প্রভাব ফেলতে পারে এবং ঘামের কারণে ফুসকুড়ি ও ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে পারে।বিশেষ করে নতুন মায়েদের মধ্যে এই প্রবণতাগুলো দেখা যায়। তাই আপনার যদি তবুও মনে হয় পাউডার ব্যবহারে আপনার সন্তানের ক্ষতি হচ্ছে তাহলে অবশ্যই কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৩. শিশুর যত্নে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় গ্রীষ্মকালীন টিপসগ্রীষ্মে প্রতিটি মানুষের শরীরেই ক্লান্তিবোধ হয়। শিশুরাও এই সমস্যাটি অনুভব করে। অনেক শিশু গরম সহ্য করতে না পেরে ছটফট করতে থাকে৷ শিশুকে এই তাপ থেকে রক্ষা করতে বা শীতল রাখতে নিন্মোক্ত বিষয়গুলো লক্ষ্য করুন :

ক. স্বাস্থ্যকর পানিশিশুর খাবারের তালিকায় রাখুন স্বাস্থ্যকর পানি। ৬ মাস বা তার কম বয়সের শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। তাই এই সময়টাতে আপনাকে অনেক সাবধান হতে হবে। তাদের সকল রোগ জীবাণু থেকে আগলে রাখতে হবে। তাই তাদের খাওয়া বা অন্য যে কোনো কাজে পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর পানি ব্যবহার করুন। শিশুকে শীতল রাখতে সর্বপ্রথম প্রয়োজন হয় পানি। এটি শিশুকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি শারীরিক দূর্বলতা কমায়। তাই শিশুকে সবসময় বিশুদ্ধ পানি খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। সম্ভব হলে বোতলজাত পানি খাওয়াবেন। তবে সেটা অবশ্যই সিল চেক করে।

গ্রীষ্মে নবজাতক শিশুর যত্নের গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস

গ্রীষ্মে নবজাতক শিশুর যত্নের গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস

খ. মশা থেকে দূরে রাখুনগ্রীষ্মকালে মশার উপদ্রব বেড়ে যায়৷ শিশুকে মশা থেকে রক্ষা করতে না পারলে অনেক সময় ম্যালেরিয়ার মতো মারাত্মক রোগও হয়ে যায়৷ তাছাড়া মশার জীবাণু শিশুদের ত্বকের জন্য খুবই বিপজ্জনক। তাই শিশুকে মশার উপদ্রব থেকে বাঁচাতে মশারি ব্যবহার করুন৷ এটি খুবই সুবিধাজনক একটি জিনিস। কিন্তু আপনি যদি মশারি ব্যবহারে অনভ্যস্ত হোন তাহলে মশার স্প্রে অথবা কয়েল ব্যবহার করতে পারেন৷ তবে এই উপাদানগুলো শিশুর স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকারক। তাই যতটা সম্ভব এসব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন।

গ. সঠিক কাপড় নির্বাচন করাশিশুরা সাধারণত ভারী জামা পরতে পছন্দ করে না। তারা সবসময় সাধারণ পোশাকেই সুবিধা পেয়ে থাকে। তাছাড়া গ্রীষ্মকালে লিলেন, নেট বা সিল্ক জাতীয় কাপড় পরালে শিশুর শরীরে ঘামাচি ওঠে। কারণ এই ধরনের কাপড়গুলোতে গরম বেশি। তাই শিশুর জন্য সুতির পাতলা কাপড় ব্যবহার করুন। সুতির কাপড় শরীরকে শীতল রাখতে সহায়তা করে।

ঘ. সাধারণ অসুস্থতা থেকে সুরক্ষা৬ মাস পর্যন্ত শিশুরা মায়ের বুকের দুধ খায়। এসময় মায়ের প্রতিটি বিষয় শিশুর ওপর প্রভাব ফেলে। তাই তাদের সুস্থ রাখতে মাকে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে। শিশুর সঠিক যত্ন নিতে হবে। শিশুর শরীরে বেশি ঘাম দিচ্ছে কিনা খেয়াল রাখতে হবে এবং কিছুক্ষণ পর পর মুছে দিতে হবে৷ শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে ও শিশুর ব্যবহৃত জিনিসপত্র সবসময়ই পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এছাড়াও প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করুন। যা আপনার এবং আপনার সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

ঙ. সূর্যের আলো থেকে সুরক্ষাশিশুদের ত্বক অনেক বেশি সূক্ষ্ম যা সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এলে সহজেই জ্বলে যায়। তাই শিশুকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে ভুলবেন না। এটি আপনার শিশুর ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে রক্ষা করবে খুব সহজেই।

চ. রুমের তাপমাত্রাঅনেক বাবা-মা বাইরের তাপমাত্রা বেশি দেখে রুমে বেশি শীতল তাপমাত্রা প্রয়োগ করে ফেলেন। কিন্তু এটি শিশুর জন্য ভালো হয় না। আপনার শিশুর শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে রুমের তাপমাত্রা নির্ধারণ করুন। এক্ষেত্রে বাইরের তাপমাত্রা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ না। আর যদি আপনার সন্তান সুস্থ থাকে তাহলে হলকাভাবে এয়ার কন্ডিশনার চালান। এটি কখনোই শিশুর ক্ষতি করবে না৷ তবে এক্ষেত্রে ২৫° সেলসিয়াস তাপমাত্রা রাখাই শ্রেয়।

গ্রীষ্মে নবজাতক শিশুর যত্নের গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস

গ্রীষ্মে নবজাতক শিশুর যত্নের গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস

ছ. প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন

যদি আপনার শিশুর ডিহাইড্রেশনের লক্ষণগুলো দেখা দেয় বা শরীরে ফুসকুড়ি ওঠে, যা উপরের ট্রিটমেন্টগুলো দ্বারা সমাধান হয় না। সেক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। যদি তারা সত্যিই তাপ সহ্য করতে না পারে তাহলে তাদের অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এর জন্য অবশ্যই সঠিক চিকিৎসা নিন।