নির্ধারিত সময়ের চর বছর আগেই পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুহার কমানোর বৈশ্বিক লক্ষ্য অর্জন করে উন্নয়ন আইকন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বাংলাদেশ।

কিন্তু তারপরেও বাংলাদেশে নবজাতকের মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি, প্রতিবছর জন্মের পর মারা যায় ৬২ হাজার নবজাতক।

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নবজাতকের মৃত্যু হয় যেসব দেশে তার একটি বাংলাদেশ। এসব শিশুর মৃত্যু হয় জীবনের প্রথম মাসে এবং অর্ধেকই মারা যায় পৃথিবীতে আসার দিনই।

বাংলাদেশে নবজাতকের মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে অপরিণত অবস্থায় জন্ম, সংক্রমণ এবং শ্বাসকষ্টের মতো ডেলিভারিকেন্দ্রিক জটিলতা থেকে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে।

বাংলাদেশে মৃতসন্তান প্রসব হারও উদ্বেগজনক, প্রতিদিনি প্রায় ২৩০টি ঘটনা ঘটে এ ধরনের। কিন্তু এগুলো অনেক সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আসে না। তাই এরকম প্রাণহানির কারণও থেকে যায় অজানা।

এর সঙ্গে প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ হাজার ২০০ নারীর মৃত্যু হয় গর্ভকালীন, প্রসবকালীন এবং সন্তান জন্মের পর সৃষ্ট জটিলতায়।

অধিকাংশ মায়েরই মৃত্যু ঘটে কোনো চিকিৎসক বা দক্ষ ধাত্রী ছাড়া বাড়িতে সন্তান প্রসবের সময়। এছাড়া গর্ভধারণকালে নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী হাসপাতাল, ক্লিনিক ও স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে গিয়ে মাতৃত্বকালীন সেবা না নেওয়ার কারণেও অনেক মায়ের মৃত্যু হয়।

গর্ভাধারিণী মায়ের পুষ্টির ঘাটতি এবং অপরিণত বয়সে গর্ভধারণের কারণে অনেক নবজাতকের ওজন কম হয়।

কম ওজনের নবজাতকের, যারা মোট জন্ম নেওয়া শিশুর ১৩ দশমিক ২ শতাংশ, বেঁচে থাকা এবং পরবর্তীতে সুষ্ঠু বিকাশের লাভের সুযোগ কমে যায়।

কিশোরী মায়েদের সন্তানদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি আরও বেশি থাকে। কারণ বাংলাদেশের ২৯ শতাংশ মেয়েই অপুষ্টির শিকার এবং তাদের শরীরে জরুরি অনেক উপাদানের ব্যাপক মাত্রায় ঘাটতি থাকে। অন্যদের তুলনায় অল্প বয়সে গর্ভধারণকারী নারীর সন্তানের মৃত্যু হার দ্বিগুণ।

বাল্য বিয়ে এখনও সাধারণ ঘটনা হওয়ায় বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় কিশোরী মায়েদের সন্তান জন্মদানের দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। প্রতি হাজার জীবিত জন্মে ১১৩টি শিশুই কিশোরী মায়ের সন্তান।

সুস্থ, স্বাভাবিক সন্তান জন্মের জন্য গর্ভধারণকালে মাকে অবশ্যই চার বা তার বেশি বার এবং সন্তান জন্মের পর চার বার চিকিৎসকের কাজে যেতে হবে। তবে এ দুটোরই হার এখনও অনেক কম। গর্ভধারণকালে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন মা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করেন।

স্বল্প শিক্ষিত মায়েদের সন্তানরা আরও বেশি অসহায়। তাদের স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার সুযোগ কম থাকে। দেখা গেছে এসব শিশুই বেশি জীবনবিনাশী রোগে আক্রান্ত হয়।


শহরের বস্তির মায়েদেরও স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার সুযোগ কম। কারণ এসব নারীদের অধিকাংশই নিম্ন মজুরিতে কাজ করেন, যা দিয়ে মৌলিক প্রয়োজন মেটানোই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। শহরের বস্তিগুলোতে নবজাতক ও মায়ের স্বাস্থ্য সেবার চ্যালেঞ্জগুলো তীব্র। কারণ নবজাতকের জন্য প্রয়োজনীয় সেবা সম্পর্কে তাদের জ্ঞান সীমিত এবং এ ধরনের চর্চাও তারা তেমন একটা করে না।

এসব প্রতিবন্ধকতা নিয়েই নতুন বৈশ্বিক টার্গেটের মুখোমুখি বাংলাদেশ। ২০৩০ সাল নাগাদ নবজাতকের মৃত্যু হার প্রতি হাজার জীবিত জন্মে অন্তত ১২ তে নামিয়ে আনতে হবে। বর্তমানে নবজাতকের মৃত্যু হার প্রতি হাজার জীবিত জন্মে ২০ জন।

নবজাতকের জীবন রক্ষায় দরকার আরও কার্যকর ও সার্বক্ষণিক অত্যাবশ্যক স্বাস্থ্য সেবা, আরও দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী এবং উল্লেখযোগ্য হারে জনগণের সুষ্ঠুভাবে হাইজিন ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা।

এছাড়া ভৌগোলিক, লৈঙ্গিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণে আরও বৃহত্তর আঙ্গিকে কার্যক্রম পরিচালনার প্রয়োজন রয়েছে।


আরো ডিটেইলস জানতে: https://www.unicef.org/bangladesh